অন্তত ২৮০ একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার না নিয়েই তিনটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়েছে। ৩০০ কোটি টাকার এই রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের জন্য জাহাজ জেটি ছেড়ে যাওয়ার তিন ঘণ্টা পেছানো হয়েছে। আবার দুপুরের শিফটের বিরতির মধ্যেও বাড়তি কাজ করে চেষ্টা করা হয়েছে, বাড়তি লোকবলও নিয়োগ করেছে বন্দর, এতে কিছু সুফল মিলেছে। এর পরও এত বিপুল রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার না নিয়েই জাহাজকে বন্দর ছাড়তে হয়েছে।
তিন কারণে এই পণ্য জাহাজে তোলা যায়নি। একটি হচ্ছে, যানজটের কারণে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে রপ্তানি কনটেইনার যথাসময়ে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছেনি। আবার বন্দর ইয়ার্ডে আগে থাকা রপ্তানি কনটেইনারগুলো বাছাই করে নির্দিষ্ট জাহাজে তুলতে ট্রেইলর সংকট ছিল। তৃতীয়ত, ঈদের ছুটির আগে আমদানি কনটেইনার ছাড় নেওয়ার জন্য বন্দরের ভেতরে-বাইরে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-লরির দীর্ঘ লাইন লেগেছে। এর ফলে আমদানি পণ্য জাহাজীকরণ এবং রপ্তানি পণ্য ছাড় নিয়ে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।
গতকাল বুধবার এক দিনে এতগুলো রপ্তানি কনটেইনার জাহাজীকরণ করতে না পারায় উদ্বেগে পড়েছেন গার্মেন্ট মালিকরা। কারণ প্রতিটি রপ্তানি পণ্যের জাহাজীকরণের একটি নির্দিষ্ট শিডিউল থাকে; সেটি ব্যর্থ হলে ওই পণ্য নির্ধারিত সময়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে না। এর ফলে বিদেশি ক্রেতারা দেরিতে পণ্য পৌঁছার অজুহাতে বিভিন্ন ধরনের ছাড় চায়—আর এতেই উদ্বেগে আছেন দেশের রপ্তানিকারকরা।
জানতে চাইলে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতা এম এ সালাম বলেছেন, ‘ডিপোগুলোতে যে পরিমাণ কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে তাতে ঈদের আগে প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটবে। এর ফলে পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে আমাদের উড়োজাহাজে অনেক বেশি খরচ দিয়ে পাঠাতে হবে। অথবা দামের ক্ষেত্রে কমিশন দিতে হবে। ’
চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এখন গার্মেন্ট মালিকরা ঈদের ছুটির সব পণ্য তৈরি করে আগেভাগেই ডিপোতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে একটি বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এটা সাময়িক। আমরা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছি, প্রয়োগও করেছি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। আশা করছি খুব জটিলতা হবে না। ’
শিপিং লাইনগুলোর তথ্য বলেছে, গতকাল বুধবার তিনটি কনটেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়েছে তিন ঘণ্টা দেরিতে। মূলত ইয়ার্ড থেকে কনটেইনারগুলো জাহাজে তোলাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি সম্ভব হয়নি। কনটেইনার জাহাজ ‘এসওএল হিন্দ’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। জাহাজটিতে বুকিং থাকা ৭১ একক রপ্তানি কনটেইনার তোলা যায়নি। সেগুলো এখন ইয়ার্ডে পড়ে আছে।
‘কেপ সাইরোস’ জাহাজটিও প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে বন্দর ছেড়েছে, এর পরও ১৫১ একক রপ্তানি কনটেইনার জাহাজে তোলা যায়নি।
‘ওয়াই এম হক’ জাহাজটি ১২টা ৪০ মিনিটে বন্দর ছাড়ার কথা ছিল। তিন ঘণ্টা দেরিতে ৪টায় বন্দর ছাড়লেও শেষ পর্যন্ত ৫৫ একক রপ্তানি কনটেইনার জাহাজে তোলা যায়নি।
শিপিং লাইনের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্দরের রপ্তানি কনটেইনার রাখার ইয়ার্ড ভর্তি হয়ে গেছে। আর কনটেইনারগুলো একটির ওপর একটি দুই-তিনস্তর করে রাখা হয়েছে। এর ফলে আজকের জাহাজের জন্য কাঙ্ক্ষিত কনটেইনারটি খুঁজে ট্রেইলর দিয়ে নিয়ে জাহাজে তোলা অনেক জটিল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বন্দরের মেরিন বিভাগ ‘টার জাহাজ ছেড়ে যাওয়া পিছিয়ে ৪টায় নিয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ বাড়তি কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে, দুপুর ১টায় এক ঘণ্টার বিরতিতেও কাজ করেছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাতে খুব বেশি সুফল মেলেনি।
আরেক কনটেইনার লাইনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গতকাল তিনটি জাহাজই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ফেলে যাওয়া কনটেইনারগুলো ঈদের আগে সিঙ্গাপুর নেওয়া সম্ভব হবে না।